লোক সংস্কৃতি ‘‘ভাওয়াইয়া গান’’ বাংলাদেশের বৃহত্তর রংপুর ও দিনাজপুর এবং পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি, পশ্চিম দিনাজপুর ও কোচবিহার ভাওয়াইয়া গানের আদি জন্মভূমি। উল্লিখিত ভৌগিলিক পরিবেষ্টনীতে অবস্থিত বলে পঞ্চগড় অঞ্চল ও ভাওয়াইয়া গানের উর্বর পরিচর্যার স্থান। এ গানের আদি উৎপত্তিস্থল হিমালয়ের পাদদেশীয় পঞ্চগড় সংলগ্ন তরাই অঞ্চল জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার। ভৌগলিক পরিবেশের কারণেই এ ভূখন্ডে উদ্ভব ঘটেছে ভাওয়াইয়া সঙ্গীতের।
পঞ্চগড়সহ উত্তর বঙ্গের এই অঞ্চলে পাহাড়ী নদীর ক্ষিপ্র ও দ্রুত গতির মধ্য দিয়ে প্রকাশ পেয়েছে অধিবাসীদের স্বতন্ত্র চারিত্র্যিক বৈশিষ্ট। এ জেলার ভাওয়াইয়া সঙ্গীতে প্রমূর্ত হয়ে উঠেছে সেই ভাব সম্পদ।
ভাব থেকে রচিত হয়েছে ভাওয়াইয়া। প্রেমের ভাব, বিরহ মিলনের আকুতি এবং নারীমনের দুঃখ বেদনার আর্তির যে ভাবময় প্রকাশ, তা তেকেই সৃষ্টি হয়েছে উদাস ধর্মী ভাওয়াইয়া গানের। আরেকটি অভিমত হচ্ছে (ভাওয়া নিচু জমি বা মহিষের চারণ ক্ষেত্র) অঞ্চলের বাউদিয়া মৈষাল বা বিরাগী বাউদিয়ার কন্ঠ নিঃসৃত বাওয়াইয়া আসা ভাবের নাম ভাওয়াইয়া।
উত্তরবঙ্গের অন্যান্য স্থানের মতো পঞ্চগড়ের রাজবংশীরা এই গানের ধারক ও বাহক। তবে এই গান হিন্দু মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের গ্রামবাসীগণের মধ্যে সমান জনপ্রিয়। নারীমনের আর্তির বহিঃপ্রকাশ ঘটলেও ভাওয়াইয়া গানের রচয়িতা ও গায়ক সাধারণত পুরম্নষ। এ গানের নায়ক মৈশাল বন্ধু, গাড়ীয়াল, মাহুত, বৈদেশী বন্ধ, রাখাল প্রভৃতি।
হুলির গান তেতুলিয়া অঞ্চলে হুলির গান সর্বাধিক প্রচলিতও জনপ্রিয়। হিন্দুদের হোলি পুজা থেকে হুলির গান নামটির উৎপত্তি হলেও সমসাময়িক ঘটনা বা অসঙ্গতিপূর্ণ সামাজিক চিত্র, প্রেম কাহিনী ইত্যাদিকে কেন্দ্র করেও ব্যঙ্গাত্মক ও হাস্যরসাত্মকভাবে এই গান পরিবেশিত হয়। সাধারণত শীতকালে রাতের বেলা এই গান পরিবেশন করা হয়। হুলি পালা শ্রেণীর গান। এতে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা থাকে ১০ থেকে ২০ জন পর্যন্ত। এই গানে যেমন রয়েছ নাটকীয়তা, তেমনি আছে কাহিনীর ধারাবাহিক বিন্যাস। কাহিনীকে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য একজন ছোকরা (মেয়ের সাজে ছেলে অভিনতা) এবং একজন সং (জোকার) উপস্থিত থাকে। এরাই দর্শক ও শ্রোতার মনযোগ আকর্ষণের কেন্দ্র বিন্দু। হুলি পরিবেশনের সময় ঢোল, বাঁশি, কাসর, সারেঙ্গী ইত্যাদি বদ্যযন্ত্র এবং বর্ণিল পোষাক ব্যবহৃত হয়।
হেরোয়াঃবিয়ে উপলক্ষে পরিবেশন করার জন্য বিয়ের গীতকে এ অঞ্চলে বলা হয় হেরোয়া। অবশ্য গানে ও পরিবশনের ভঙ্গি উত্তরবঙ্গের অন্যান্য এলাকর মতোই অভিন্ন। হেরোয়ার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো বিয়ের কয়েকদিন পূর্ব থেকেই বিশেষত কনে বাড়িতে একদল মহিলা সমবেত হয়ে বিলম্বিত লয়ে গান গাইতে থাকে। এই সব গানের মধ্যে থাকে কনের জীবনের স্মৃতিচারন, তার ভবিষ্যৎ করুণ অবস্থার বর্ণনা এবং বর ও তার আত্মীয় স্বজনদের উদ্দেশ্যে মন্দ উক্তি। অবশ্য কনে বিদায়ের দৃশ্যে প্রকাশিত হয় চিরমত্মন করম্নণ সুরের মূর্চ্ছনা।
Planning and Implementation: Cabinet Division, A2I, BCC, DoICT and BASIS